ইসলামে মানবসেবা

ইসলামে মানবসেবা::::::

মানবতার মুক্তির দূত, বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মানব সেবার জন্য আরবের যুবকদের নিয়ে গঠন করেছিলেন হিলফুল ফুজুল। দরিদ্র ও দুস্থদের সহায়তা করেছেন নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে। মানব সেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।

তাইতো তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের আসনে আসীন হয়েছেন।

আসলে আমাদের সৃষ্টিই করা একে অপরের কল্যাণকামীতার জন্য। বিপদে-আপদে একে অন্যের পাশে থাকা ও সহযোগিতার হাতকে সম্প্রসারণের জন্য।

আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির পরিচয় এভাবে তুলে ধরেছেন, তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি, মানুষের কল্যাণের জন্য তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১১০)

অভুক্ত ব্যক্তিকে আহার্য দেয়ার ফজিলত বলতে গিয়ে রাসূল (সা.) বলেছেন, মানুষের কল্যাণ-সংশ্লিষ্ট যত কাজ আছে, তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম হচ্ছে দরিদ্র ও ক্ষুধার্তকে খাবার দান করা। (বুখারি, হাদিস : ১২)

রাসূল (সা.) আরও বলেছেন, ‘কোনো বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্যরত থাকে, আল্লাহ তায়ালাও ততোক্ষণ তাকে সাহায্য করতে থাকেন।’ (তিরমিজি)

মানবতার সবক শেখাতে গিয়ে রাসূল (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাকে জিজ্ঞেস করবেন, আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম, তুমি আমাকে আহার্য দাওনি। আমি তৃষ্ণার্ত ছিলাম, তুমি আমাকে পানি দাওনি। আমি অসুখে ভুগছিলাম, তুমি আমার সেবা করনি। (কেন?)

বান্দা তখন অবাক হয়ে বলবে, হে আমার প্রতিপালক, তুমি যে অভাবমুক্ত, তুমি তো খাও না, পান কর না, তুমি কীভাবে ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত ও অসুস্থ হতে পার?

আল্লাহ তায়ালা তখন প্রতিউত্তরে বলবেন, আমার অমুক বান্দা যে ক্ষুধার্ত হয়ে তোমার দুয়ারে হাজির হয়েছিল, তুমি তো তাকে খাবার দাওনি, তাকে দিলে আমাকে দেয়া হতো। পিপাসার্তকে তুমি পানি পান করাওনি, তাকে পানি দিলে আমাকে দেয়া হতো।

রোগশোকে ভোগা ব্যক্তি কষ্টে ছটফট করতো, তার সেবা করলে আমাকে সেবা করা হতো, তুমি কী এটা জানতে না? (মুসলিম)

পবিত্র কোরআনের বহু জায়গায় মহান আল্লাহ তায়ালা গরীব, অসহায়, দিনমজুর ও মিসকিনদের খাবার দান করার কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি তাকে দুটি পথ প্রদর্শন করেছি। অতঃপর সে ধর্মের ঘাঁটিতে প্রবেশ করেনি।

আপনি জানেন, সে ঘাঁটি কী? তা হচ্ছে দাসমুক্ত করা কিংবা দুর্যোগ ও সঙ্কটের দিনে এতিম আত্মীয়স্বজন ও ধুলো-ধূসরিত মিসকীনদের অন্নদান করা।’ (সূরা বালাদ, আয়াত : ১০-১৬)’

ইসলাম আল্লাহ তায়ালার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের কথা যেমন বলে, তেমন বলে মানব সেবার কথাও।

রাসূল (সা.) বলেন, সমস্ত মাখলুক আল্লাহ তায়ালার পরিবারের মতো, আর তোমাদের মধ্যে তারাই আল্লাহর কাছে বেশি পছন্দনীয়, যারা তাঁর পরিবারের প্রতি বেশি দয়াশীল।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, পূর্ব ও পশ্চিমে মুখ ফেরানোতে কোনো পুণ্য নেই; পুণ্য আছে আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতাগণ, সমস্ত কিতাব ও নবীদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলে এবং আল্লাহ তায়ালাকে ভালোবেসে আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, মুসাফির, সাহায্য প্রার্থীদের ও দাসমুক্তির জন্য অর্থ দান করলে, নামাজ কায়েম করলে, জাকাত প্রদান করলে, প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা রক্ষা করলে, অর্থ সংকটে, দুঃখ-কষ্ট ও যুদ্ধ-সংকটে ধৈর্য ধারণ করলে। (মূলত) এরাই হল সত্যপরায়ণ (এবং) এরাই হল আল্লাহভীরু। (সূরা : বাকারা, আয়াত : ১৭৭)

মানব সেবায় আল্লাহর রাসূলের সাহাবিদের দৃষ্টান্তও কম নয়। নিজেরা অভুক্ত থেকে তারা অন্যদের খাওয়াতেন। একবার আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর কাছে এসে নিজের ক্ষুধার কথা জানালে তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কি আজ রাতে তাকে খাওয়াতে পারবে?

তখন এক আনসারী সাহাবী বললেন, আমি খাওয়াব। সাহাবির নিজের ঘরেই ছিল খাবার সঙ্কট। একজন খেতে পারে এতটুকু খাবারই কেবল অবশিষ্ট ছিল।

তবুও তিনি লোকটিকে তার বাসায় নিয়ে গেলেন এবং স্ত্রীকে বললেন,এই লোক নবীজী (সা.)-এর মেহমান। আমাদের সাধ্যমতো তাকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। স্ত্রী বলল, ঘরে যা খাবার আছে তাতো যথেষ্ট পরিমাণম নয়! তাছাড়া বাচ্চারাও ক্ষুধার্ত।

স্ত্রীর কথা শুনে সাহাবি বললেন,বাচ্চাদের না খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দাও। আমি মেহমান নিয়ে খেতে বসলে তুমি ঘরের বাতি নিভিয়ে দেবে। যেন মেহমান আমি খেলাম কি খেলাম না তা বুঝতে না পারে।

পৃথিবীর বুকে মানবতার এরচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত আর হতে পারে না।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) যখনই খাবার খেতেন, সঙ্গে একজনকে নিয়ে খেতেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা তার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন, আর তারা আল্লাহকে ভালোবেসে খাদ্য দান করে মিসকিন, এতিম ও বন্দিদের। তারা বলে, শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা তোমাদের খাদ্য দান করেছি, তোমাদের কাছে আমরা এর জন্য কোনো বিনিময় চাই না এবং কোনো কৃতজ্ঞতাও না।’ (সূরা : দাহর, আয়াত : ৮-৯)

মুক্তির ধর্ম ইসলাম আমাদেরকে, রাসূলের মহানুভবতা, মানবতা ও আতিথেয়তার নীতি ও আদর্শ বাস্তবায়নের এবং বৃদ্ধ, দিনমজুর, মিসকিন ও শিশুদের মুখে একটুখানি হাসি ফোটানোর শিক্ষাই দেয়।

Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.